রবিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৩

উপন্যাস : হা-না

পূর্বের অংশ

তখনো হাসি শেষ হয়নি। হানি বললো, ‘আমাকে আপনার তিন নম্বর বৌ বলতে পারেন, আর আপনার নিজের অবস্থানটাই বলতে পারেন না!’
হানি এই মুহূর্তে সামনে থাকলে দেখতে পেতো, নাফিস কেমন অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে।
হানি কোনো কথা না বলেই লাইন কেটে দিলো মোবাইলের।
এবার আরো অসহায় বোধ করতে লাগলো নাফিস। এদিক-ওদিক কেউ আছে কি না দেখে নিলো—যদিও আশেপাশে কেউ থাকার কথা না। ওর একজন কর্মচারী আছে; কিন্তু সে শুধু ওর না। তিন দোকান মিলে একটা ছেলেকে রাখা হয়েছে। ছেলেটা সামনের প্যাসেজে বসে থাকে; যখন যে দোকানের বেল বাজে, তখন সেই দোকানে সে আসে। পাশের দুই দোকানের একটা কম্পিউটারের; আরেকটা এক কনসালটেন্টের। কারখানার মেশিনপাতি কেনার ক্ষেত্রে তিনি কনসালটেন্সি করেন। কনসালটেন্ট আর নাফিসের সবচেয়ে কম লাগে মেসেঞ্জারকে।
নাফিসের ভিজিটিং কার্ডে লেখা আছে ‘সাপ্লায়ার’।
নির্দিষ্ট কোনো জিনিশ নেই। বিভিন্ন কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে যখন যেটার অর্ডার পায় সেটাই এনে দেয় বিদেশ থেকে। কখনো চাবির রিং, কখনো ডিমের খাঁচি, কখনো বা ভ্যানিটি ব্যাগ। এজন্য এ মাসে ও চীন তো পরের মাসে ইন্ডিয়া, এর মাঝে আবার আরব আমিরাত। ছোট্ট পুঁজি নিয়ে নির্দিষ্ট জিনিশের ব্যবসা করতে গেলে মার খেতে হবে। তখন বাজারে আরো যারা প্রতিযোগী আছে, তাদের সাথে পাল্লা দিতে হবে। সেক্ষেত্রে পুঁজি লাগবে কয়েকশো গুণ বেশি।
ব্যবসার আয় দিয়ে সংসার চললেও ওর খ্যাতি গায়ক হিসেবে। তবে সংসারে সংগীত দুই দিক থেকে সম্পর্কহীন। সংগীত থেকে যা আয় হয় তা সংসারের উন্নতিতে কাজে আসে না। দ্বিতীয়ত ফাহমিদার ঘোষণা অনুযায়ী সংসারে সংগীতের প্রবেশ নিষিদ্ধ। ফাহমিদা ওর স্ত্রীর নাম।
গায়ক হিসেবে ও পরিচিত হয়েছে বেশিদিন হয়নি। স্কুল-কলেজে গান গেয়েছে; ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীনও অনুশীলন ছাড়েনি। এসব জায়গায় যেসব অনুষ্ঠান হয় অর্থাৎ সংবর্ধনা, নবীন বরণ, পিকনিক—এসবেই ওর গান গাওয়া সীমাবদ্ধ ছিলো। এমএস করতে ইংল্যান্ড যাওয়ার পর ক্যাম্পাসে একদিন বন্ধুরা মিলে গান গাইছিলো। বাংলাদেশীদের মধ্যে সেখানে ছিলো সাব্বির আর ফয়েজ। সাব্বির আবার অলটাইমে চাকরি করে। অলটাইমের টাকায়ই কোর্স করার জন্য ইংল্যান্ড গেছে। সাব্বির ওর গান শোনার পর কতক্ষণ চুপ থেকে বললো, ‘নাফিস ভাই, আপনার রুমে আজ আমার দাওয়াত।’
‘আজ তো আমার রান্নার দিন না।’


চলবে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন