শনিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

উপন্যাস : হা-না

পূর্বের অংশ

হোটেল থেকে খাবার নেবো।’
‘আপনার রান্না করা লাগবে না। আমিই রান্না করবো।’
আলু, ফুলকপি, মাছ আর ডাল নিয়ে সাব্বির চলে এলো নাফিসের আপারটোনের বাসায়। রান্নায় নিজেই লেগে গেলো ও। নাফিসকে কিছু করতে দিলো না। বললো, ‘আপনি আজ গান গাবেন আর আমি শুনবো। আপনার গান শুনে আমার এক দাদার কথা মনে পড়ে গেলো। দাদার চাচাতো ভাই ছিলেন তিনি। আমাদের বাড়ির মসজিদে আজান দিতেন। তার আজানটা মনে হতো নদীর স্বাভাবিক পানির গতির মতো ভেতর থেকে স্বাভাবিকভাবে বেরিয়ে আসছে; তিনি কোনো কোশেশ ছাড়াই আজান দিচ্ছেন। সেই দাদা মারা গেছেন আরো সাত বছর আগে। আপনার গান শুনে আজ আমি অনুভব করলাম আপনার গানও ভেতর থেকে আসে; আপনি নিজের ওপর কোনো চাপ দেন না। শ্রোতা হিসেবে আমি যা বুঝি, আপনাকে তাই বললাম।’
সাব্বির রান্না শুরু করে দিলো; ও শুরু করলো গান। হিসাব করে দেখেছে, সেদিন ও সাব্বিরকে বাইশটা গান শুনিয়েছে।
সাব্বির জানতে চাইলো, ‘নাফিস ভাই, এত সুন্দর গানের গলা নিয়ে আপনি চুপ রইলেন কীভাবে?’
‘গান গাইতে জানলেই কি দুনিয়ার সবাইকে গেয়ে শোনাতে হবে?’
‘তা না। কিন্তু এটাও তো এক রকমের কৃপণতা যে, আপনার কাছে একটা উপকারী জিনিশ আছে; কিন্তু আপনি কারো উপকার করলেন না। যার জ্ঞান আছে, সে তার জ্ঞান দিয়ে মানুষের উপকার করবে; যার সম্পদ আছে, সে তার সম্পদ দিয়ে মানুষের উপকার করবে।’
‘যার শক্তি আছে, সে তার শক্তি দিয়ে?’
‘যার শক্তি আছে, তাকে তো আর বলতে হয় না। সে তার শক্তি দিয়ে মানুষের অপকার প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছে।’
‘সাব্বির ভাই, চিন্তা আছে দুনিয়া ঘুরে বেড়ানো। সেজন্য টাকা-পয়সা লাগবে; তাই ব্যবসা করতে হবে কিছু দিন। টাকা জমিয়ে নেমে পড়বো সফরে।’
‘তাহলে তো আপনার আরো গান গাওয়ার ব্যাপক সুযোগ। একেকটা পর্যটনকেন্দ্রে যাবেন; গান গাইবেন; সেখান থেকে যে টাকা আসবে তা দিয়ে আরেকটা দেশ ঘুরতে পারবেন।’
‘হ্যাঁ, যদি আমার গান শুনে যে দেশে থাকবো সে দেশ থেকে বের করে অন্য দেশে পাঠিয়ে দেয়, খারাপ না। বিনা পয়সায় দেশ ঘোরা যাবে।’
‘সব গুণীই এরকম বলে। পরে যখন বিখ্যাত হয়ে যায় তখন আবার ভাব নেয়।’
‘সেজন্যই তো প্রকাশ্যে গাইতে চাইছি না। তাহলে কি না আপনার মতো বন্ধুকে হারাতে হয়।’
‘কেন?’
‘আপনিই তো বললেন, বিখ্যাত লোকেরা ভাব নেয়। ভাব নিয়ে যদি আপনার মতো লোকের বিরাগভাজন হই, সেটা আমার জন্য বড় কিছু হারানো হবে।’
টেংরা মাছ দিয়ে রান্না করা আলু আর ফুলকপি দিয়ে সেদিন দুজনেই তিন থাল করে ভাত খেয়েছিলো। খেতে খেতে সাব্বির আসল কথাটা তুললো। ‘নাফিস ভাই, আপনি আমাদের চ্যানেলে গান গাইবেন। ওদিকে যা করা দরকার, আমি করবো।’
চিরাচরিত স্বভাবের মতো সেদিনও নাফিস এর জবাবে কিছু বলতে পারেনি। কোনো দিনই পারেনি কারো প্রস্তাবে সরাসরি না বলতে।
এর একুশ দিন পর অলটাইম চ্যানেলে নাফিসের গান প্রচারিত হলো। লন্ডনেই একটা স্টুডিওতে রেকর্ড করা হয়েছিলো গান। ওর জন্য দিনটা হওয়ার কথা ছিলো একটা আনন্দের দিন; সুখের দিন। কিন্তু সেটা মোটেই হয়নি।

চলবে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন