বৃহস্পতিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

উপন্যাস : হা-না


পূর্বের অংশ


সংগীত থেকেই হানির সাথে পরিচয় নাফিসের। ও সেদিন ফেসবুকে ঢুকে মাউসের চাকা ঘোরাচ্ছিলো। ভিন্ন রকমের একটা কমেন্টে চোখ আটকে গেলো ওর। অনলাইনে কমেন্টগুলি সাধারণত ‘খুব সুন্দর’, ‘মারাত্মক’, ‘অসাধারণ’—এরকমের হয়। কোনো বিশ্লেষণমূলক মন্তব্য থাকে না। ওগুলোতে ও অভ্যস্ত। কিন্তু এই মেয়েটা যে প্রশ্নটা করেছিলো, তা ছিলো : সুন্দরীর প্রেমে পড়া নিয়ে আপনারা এত গান গান, সুন্দরী হওয়ার কারণে এসিডে জীবন শেষ হয়ে যাওয়া নিয়ে কোনো গান কেন গান না?
মেয়েটার প্রোফাইলে ঢুকে দেখতে পেলো নুয়ে পড়া একটা ফুলের ছবি দেয়া। মেয়েরা হয় কোনো বাচ্চার, অথবা কোনো নায়িকার কিংবা সুন্দর একটা ফুলের ছবি দেবে প্রোফাইলে। কিন্তু নুয়ে নেতিয়ে পড়া ফুলের ছবি সেই প্রথম ও কারো প্রোফাইলে দেখলো। মেসেজ পাঠিয়ে জবাব দিলো, ‘গানের সিডি-ডিভিডির খবর বা বিজ্ঞাপনে কী লেখা থাকে, বলুন তো।’
ও নিজেই আবার লিখলো, ‘লেখা থাকে, প্রকাশ খানের লারে লাপ্পা এখন বাজারে। বাজারের জন্য যেটা তৈরি হয়েছে, সেটাকে বাজারে চলনসই হতে হবে। বিষয় যতই সুন্দর হোক, সবার আগে চিন্তা থাকে—এই বিষয়টা বাজারে চলবে কি না। শিল্পী ইচ্ছে করলে সুন্দর গান ওয়েবে ছেড়ে দিতে পারে। তাকে কেন সিডি-ডিভিডিতে বন্দী করতে হবে? কিন্তু তাহলে আপাতদৃষ্টিতে তার কিছু পাওয়া হলো না। আপনি যা-ই ভাবেন না কেন, সত্য কথা হলো মা-বাবাও সন্তানকে নিয়ে চিন্তা করে, এই ছেলে বা এই মেয়ে চলবে কি না। তার জ্ঞান, তার সৌন্দর্য—এগুলো বাজারের চাহিদা অনুযায়ী না হলে সেই সন্তানকে নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। তাকে চলনসই করার জন্য মা-বাবার কোশেশের শেষ থাকে না।’
‘আপনার যুক্তির সাথে পুরোপুরি একমত হতে পারলাম না।’
‘আমি যা দেখছি এবং দেখেছি, তারই ভিত্তিতে বললাম।’
‘আপনার দেখা যায় দুই বছরে একটা অ্যালবাম বের হয়। এত ব্যবধান থাকে কেন?’
‘বাজারে চলার জন্য বলতে হবে, পছন্দসই গানের কথা-সুর পাইনি কিংবা ভীষণ ব্যস্ত। আর বাস্তবতা হলো...।’
‘বাস্তবতা কী?’
‘থাক। আপনার পুরো নাম কী?’
‘সংক্ষিপ্ত আর সম্পূর্ণ যা-ই বলেন, আমার নাম একটাই। ইংরেজিতে বললে মধু, আরবিতে খুশী, নোয়াখাইল্যা ভাষায় বললে পানি। কোনো দিক থেকেই খারাপ না।’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন