শনিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

উপন্যাস : হা-না


পূর্বের অংশ

সেদিনের ক্যাম্পাসের বিকেলের মতো ওর রুমে আজ বসে আছে পরিচিতজনেরা। সাব্বির-ফয়েজ তো অবশ্যই আছে। খাওয়াদাওয়ার আয়োজনও হয়েছে। সাব্বির তেহারি রান্না করে রেখেছে। হয়তো বা কারো কাছে সেই তেহারির ঘ্রাণ তাড়া দিচ্ছিলো, গান কেন তাড়াতাড়ি শেষ হয় না?
টিভিতে গান শেষ হওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশ থেকে কল এলো। ফাহমিদা কল করেছে। ‘তুমি না কি টিভিতে গান গেয়েছো?’
‘কেন, তুমি দেখোনি?’
‘তুমি কি জানিয়েছো, আজ তোমার গান দেখাবে টিভিতে?’
নাফিসের তখন কাচুমাচু অবস্থা। সোফা থেকে উঠে ব্যালকনিতে চলে এলো। ফাহমিদা বললো, ‘যেহেতু এটা কোনো সরাসরি অনুষ্ঠান না, অনেক আগেই এর পরিকল্পনা হয়েছে। আমাকে জানালে কি আমি খুব অখুশী হতাম?’
‘তুমি না জানলে অনুষ্ঠান দেখলে কীভাবে?’
‘আমরা অ্যাড দেখে জেনেছি।’
নাফিস কিছুক্ষণের জন্য চুপ করে গেলো। কী বলবে খুঁজে পেলো না। তাৎক্ষণিক জবাব আজো পর্যন্ত কাউকে ও দিতে পারেনি। ফাহমিদাকে তো নয়ই। জবাব না দিতে পেরে শেষ পর্যন্ত উপায় থাকে মাফ চাওয়া। এপর্যন্ত যে কত বার স্ত্রীর কাছে মাফ চেয়েছে, তা গুনে শেষ করা যাবে না। কিন্তু মাফ চাইতে চাইতেও মাফ চাওয়া বিষয়টা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, এটাকেও সম্ভবত ফাহমিদা গুরুত্ব দিচ্ছে না। সর্বশেষ উপায় চুপ করে থাকা। চুপ করে সব শুনে যায়।
ফাহমিদা বললো, ‘তুমি যে ওখানে মহাআনন্দে আছো, বুঝতে পারছি। আনন্দের জোয়ারে সব ভুলে গেছো। ভুলে গেছো, তোমার একজন স্ত্রী আছে। বিছানায় গেলে কল দাও কারণ শুধু তখন আমার অভাব অনুভব করো। সেরকম মেয়ে হলে বলতাম, শুধু এই একটা অভাববোধ থেকে আমাকে মনে রাখার দরকার নেই। যে দেশে আছো, সে দেশে তো এই অভাব পূরণ করা খুবই সহজ। কিন্তু আমি তোমাকেই বিয়ে করেছিলাম, তোমাকে নিয়েই থাকতে চাই।’
ফাহমিদা কেঁদে দিলো। নাফিসের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। লাইনটা কেটে যাওয়ার পরও ও কানে মোবাইল ধরে বাইরে তাকিয়ে রইলো অনেকক্ষণ। ভেতর থেকে সাব্বিরের ডাক শুনে ব্যালকনি ছাড়লো।
যদিও এতজন থাকার নিয়ম নেই তবু এই বাড়িটায় ওসহ এগারোজন থাকে। সাব্বির-ফয়েজ ওর ঘনিষ্ঠ হলেও দুজন আবার অন্য বাড়িতে থাকে। পাশাপাশি বাড়ি অবশ্য।
ততক্ষণে হুড়মুড় করে নিচে নামা শুরু হয়ে গেছে। সাব্বির সবার পেছনে। ও কি কিছুটা বুঝতে পেরেছে? এগিয়ে এসে নাফিসের পিঠে হাত রেখে বললো, ‘কোনো সমস্যা হলো না কি নাফিস ভাই?’
নাফিস নিজের ঘাড়ে হাতের তালু ঘষতে ঘষতে বললো, ‘একটা বিরাট ভুল করে ফেলেছি। বৌ খুব কষ্ট পেয়েছে।’
‘আমাকে কি বলা যায়?’
‘হ্যাঁ। টিভিতে যে আমার গান প্রচারিত হবে, এটা আমি ওকে বলতে ভুলে গেছি।’
সাব্বিরও নিচের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আসলেই এটা মারাত্মক ভুল হয়েছে। তবে আপনি বললে আমি ভাবীর সাথে কথা বলে দেখতে পারি।’
‘দ্যাখেন।’
‘ঠিক আছে, বলবো। আগে চলেন খাই। ওরা নিজেরা নিয়ে খাওয়া শুরু করলে পাতিল খালিও হয়ে যেতে পারে।’
খাওয়ার পর সাব্বির দশ মিনিটেরও বেশি সময় ফাহমিদার সাথে কথা বলেছিলো। নাফিস পাশে থেকে শুনছিলো সেসব কথা। ফাহমিদা নিজের তরফ থেকে কোনো কথা বলেনি। সাব্বির বোঝানোর চেষ্টা করছিলো, নাফিস নিজের গান কেমন না কেমন হয় তা নিয়ে খুবই লজ্জায় ছিলো। এজন্য কাউকেই এই অনুষ্ঠানের কথা বলেনি। প্রচার-প্রচারণা যা চালানোর তা সাব্বির নিজেই চালিয়েছে। এমনকি পুরো উদ্যোগের পেছনেই ছিলো সাব্বির।
ফাহমিদা প্রশ্ন করেছিলো, ‘সাব্বির ভাই বিয়ে করেছেন কি না জানি না। না করলেও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বোঝার কথা।’
‘বাংলাদেশের স্বামীরা স্ত্রীদের কাছ থেকে খোঁচা খেয়ে অভ্যস্ত তো, তাই নাফিস ভাই হয়তো শুরুতেই নিরুদ্দম হওয়ার ভয়ে আপনাকে বলেননি। অ্যালবাম বের হওয়ার পর আপনাকে দিয়ে মোড়ক উন্মোচন করিয়ে আপনাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছেন।’
‘ঠিক আছে সাব্বির ভাই, আমার এখন ভালো লাগছে না।’ একথা বলে ফাহমিদা লাইন কেটে দিয়েছিলো।
এরপর থেকে আজো পর্যন্ত নাফিসের গানের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না ফাহমিদা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন