শুক্রবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

উপন্যাস : হা-না


পূর্বের অংশ

নামটা শুনে ঢোক গিলতে হয়েছিলো ওকে; কারণ হানি নিয়ে এর আগের এক তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে ওর। ওর শাশুড়ী বাড়িতে সব সময় মধু রাখেন। বাগেরহাট থেকে এক লোক প্রতিমাসে একবার এসে মধু, কালিজিরার তেল, সরিষার তেল—এগুলো দিয়ে যায়। নাফিস ওর মোবাইলে সেই লোকের নম্বর সেভ করে রাখলো হানি লিখে। শ্বশুরবাড়ির মধু শেষ হওয়ার পর ওর শাশুড়ী একদিন বললেন, ‘নাফিস, এক কেজি মধু এনো।’ তখন সকাল নয়টা; ও ওফিশের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।
কিন্তু মোবাইলের পুরো ফোনবুক খুঁজেও হানিকে আর পেলো না। ফাহমিদাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তুমি কি আমার মোবাইল থেকে কোনো নম্বর মুছে দিয়েছো?’
‘মুছেছি তোমার প্রেমিকার নম্বর।’
‘প্রেমিকার নম্বর মানে?’
‘নাম তো আর আমি জানি না; হানি লিখে সেভ করে রেখেছিলে।’
নাফিস চেহারায় বিরক্ত ভাব নিয়ে ফাহমিদার দিকে তাকালো।
ফাহমিদা বললো, ‘এভাবে তাকাচ্ছো কেন?’
‘আরে, তুমি জানো ওটা কার নম্বর?’ একটু উঁচু স্বরেই বললো ও।
‘সেটা তুমিই ভালো জানো, তোমার কত নম্বর প্রেমিকা সে ছিলো।’
‘ওটা মধুওয়ালার নম্বর। তোমার আম্মাকে যে মধু এনে দিই, এই লোকের কাছ থেকেই নিই। ফোন দিলে সে ওফিশে এসে মধু দিয়ে যায়।’
ফাহমিদা তখন বিছানা গুছাচ্ছিলো। নাফিসের দিকে ফিরে বললো, ‘লোকটা তোমার ওফিশে আবার আসবে; তখন ফোন নম্বর আর মধু দুটোই রাখা যাবে। মধুটা এমন কোনো জরুরী খাবার না যে, দু-একদিন না খেলে সমস্যা হবে।’
এজন্য হানি নামটা প্রথম দেখেই ওকে ঢোক গিলতে হয়েছিলো। কিন্তু ফোনবুকে আর হানি নাম ঢোকেনি; কারণ হানি ওকে এখনো ফোন নম্বর দেয়নি। ফাহমিদা নিয়মিত ওর ফোনবুক, মেসেজ, কললিস্ট চেক করে।


নাফিস এখন কম্পিউটারের মনিটরের দিকে তাকিয়ে আছে। একটা মাছি বসে আছে মনিটরের ওপর। কার্সরটা অনেক নাড়িয়ে মাছিটাকে তাড়ানোর চেষ্টা করলো ও। কিন্তু মাছি সম্পূর্ণ নির্বিকার। কোনো ভাবান্তর নেই সেটার মধ্যে। মাছিটা কি কার্সরের নড়াচড়া দেখতে পাচ্ছে না, না কি সেটা বুঝতে পারছে কার্সর তার কিছু করতে পারবে না? মানুষ মানুষের হাতে একই প্রতারণায় বারবার প্রতারিত হয়। কিন্তু অন্য প্রাণীরা একবার মানুষের কোনো প্রতারণায় ধরা খেলে সেখানে আর যায় না ছোটবেলা চড়–ই ধরতে গিয়ে নাফিস দেখেছে, যে চড়–ই একবার শস্যদানা খেতে এসে খাঁচায় আটক হওয়ার আবার কোনোভাবে বেরিয়ে যেতে পেরেছে, সেই চড়–ই আর কখনো ওখানকার শস্য খেতে আসেনি। সুন্দরবনের ইন্ডিয়া অংশে মৌয়ালরা মাথার পেছনে মুখোশ পরে বাঘকে ধোঁকা দেয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ওরা সেটা ধরে ফেলে; এখন আর মুখোশ দিয়ে বাঘকে ভয় দেখানো যাচ্ছে না। সেদিন টিভিতে এটা জানালো।
অবশ্য ওর সামনে বসে আছে একজন মানুষ; আক্তারুজ্জামান নাম। আক্তারুজ্জামান চায় এখানে এসে কিছুটা সময় কাটাতে। নাফিস তাকে সময় কাটাতে দিচ্ছে। কিন্তু সে যেভাবে সময় কাটাতে চাচ্ছে, তা পারছে না। সে চাচ্ছে নাফিসকে নানান তথ্য দিতে। কিন্তু ও তাকে কিছু না বলে বসে থাকতে বলেছে। প্রেমিকার সামনে প্রেমিক কোনো কথা না বলে চুপ থাকতে পারে। সরকারী কর্মচারীদের সামনেও লোকজনকে কোনো কথা না বলে চুপ করে বসে থাকতে হয়। চামচা ধরনের লোকদেরকে তাদের নেতা বা মালিক চুপ করে বসে থাকতে বললে তারা বসে থাকে। কিন্তু আক্তারুজ্জামান এই তিন শ্রেণীর কোনো শ্রেণীতে নেই। তবুও সে বসে আছে। নাফিসের সাথে তার সম্পর্ক ব্যবসায়িক হওয়ায় তার উচিত এসে দরকারী কথা বলে চলে যাওয়া। কিন্তু সে এখানে এলেই আর উঠতে চায় না। এজন্য নাফিস তাকে আসার আগে ফোন করে আসতে বলেছে। তার সাথে ও এমনভাবে সময়টা ঠিক করে, যাতে বাড়ি ফেরার সর্বোচ্চ চল্লিশ মিনিট সময় বাকি থাকে। চল্লিশ মিনিট থাকতে এলে আক্তারুজ্জামানকে ত্রিশ মিনিট বসে থাকতে হয়। শেষ দশ মিনিটে নাফিস তার কথা শোনে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন