শুক্রবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

উপন্যাস : হা-না


পূর্বের অংশ

নামটা শুনে ঢোক গিলতে হয়েছিলো ওকে; কারণ হানি নিয়ে এর আগের এক তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে ওর। ওর শাশুড়ী বাড়িতে সব সময় মধু রাখেন। বাগেরহাট থেকে এক লোক প্রতিমাসে একবার এসে মধু, কালিজিরার তেল, সরিষার তেল—এগুলো দিয়ে যায়। নাফিস ওর মোবাইলে সেই লোকের নম্বর সেভ করে রাখলো হানি লিখে। শ্বশুরবাড়ির মধু শেষ হওয়ার পর ওর শাশুড়ী একদিন বললেন, ‘নাফিস, এক কেজি মধু এনো।’ তখন সকাল নয়টা; ও ওফিশের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।
কিন্তু মোবাইলের পুরো ফোনবুক খুঁজেও হানিকে আর পেলো না। ফাহমিদাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তুমি কি আমার মোবাইল থেকে কোনো নম্বর মুছে দিয়েছো?’
‘মুছেছি তোমার প্রেমিকার নম্বর।’
‘প্রেমিকার নম্বর মানে?’
‘নাম তো আর আমি জানি না; হানি লিখে সেভ করে রেখেছিলে।’
নাফিস চেহারায় বিরক্ত ভাব নিয়ে ফাহমিদার দিকে তাকালো।
ফাহমিদা বললো, ‘এভাবে তাকাচ্ছো কেন?’
‘আরে, তুমি জানো ওটা কার নম্বর?’ একটু উঁচু স্বরেই বললো ও।
‘সেটা তুমিই ভালো জানো, তোমার কত নম্বর প্রেমিকা সে ছিলো।’
‘ওটা মধুওয়ালার নম্বর। তোমার আম্মাকে যে মধু এনে দিই, এই লোকের কাছ থেকেই নিই। ফোন দিলে সে ওফিশে এসে মধু দিয়ে যায়।’
ফাহমিদা তখন বিছানা গুছাচ্ছিলো। নাফিসের দিকে ফিরে বললো, ‘লোকটা তোমার ওফিশে আবার আসবে; তখন ফোন নম্বর আর মধু দুটোই রাখা যাবে। মধুটা এমন কোনো জরুরী খাবার না যে, দু-একদিন না খেলে সমস্যা হবে।’
এজন্য হানি নামটা প্রথম দেখেই ওকে ঢোক গিলতে হয়েছিলো। কিন্তু ফোনবুকে আর হানি নাম ঢোকেনি; কারণ হানি ওকে এখনো ফোন নম্বর দেয়নি। ফাহমিদা নিয়মিত ওর ফোনবুক, মেসেজ, কললিস্ট চেক করে।


নাফিস এখন কম্পিউটারের মনিটরের দিকে তাকিয়ে আছে। একটা মাছি বসে আছে মনিটরের ওপর। কার্সরটা অনেক নাড়িয়ে মাছিটাকে তাড়ানোর চেষ্টা করলো ও। কিন্তু মাছি সম্পূর্ণ নির্বিকার। কোনো ভাবান্তর নেই সেটার মধ্যে। মাছিটা কি কার্সরের নড়াচড়া দেখতে পাচ্ছে না, না কি সেটা বুঝতে পারছে কার্সর তার কিছু করতে পারবে না? মানুষ মানুষের হাতে একই প্রতারণায় বারবার প্রতারিত হয়। কিন্তু অন্য প্রাণীরা একবার মানুষের কোনো প্রতারণায় ধরা খেলে সেখানে আর যায় না ছোটবেলা চড়–ই ধরতে গিয়ে নাফিস দেখেছে, যে চড়–ই একবার শস্যদানা খেতে এসে খাঁচায় আটক হওয়ার আবার কোনোভাবে বেরিয়ে যেতে পেরেছে, সেই চড়–ই আর কখনো ওখানকার শস্য খেতে আসেনি। সুন্দরবনের ইন্ডিয়া অংশে মৌয়ালরা মাথার পেছনে মুখোশ পরে বাঘকে ধোঁকা দেয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ওরা সেটা ধরে ফেলে; এখন আর মুখোশ দিয়ে বাঘকে ভয় দেখানো যাচ্ছে না। সেদিন টিভিতে এটা জানালো।
অবশ্য ওর সামনে বসে আছে একজন মানুষ; আক্তারুজ্জামান নাম। আক্তারুজ্জামান চায় এখানে এসে কিছুটা সময় কাটাতে। নাফিস তাকে সময় কাটাতে দিচ্ছে। কিন্তু সে যেভাবে সময় কাটাতে চাচ্ছে, তা পারছে না। সে চাচ্ছে নাফিসকে নানান তথ্য দিতে। কিন্তু ও তাকে কিছু না বলে বসে থাকতে বলেছে। প্রেমিকার সামনে প্রেমিক কোনো কথা না বলে চুপ থাকতে পারে। সরকারী কর্মচারীদের সামনেও লোকজনকে কোনো কথা না বলে চুপ করে বসে থাকতে হয়। চামচা ধরনের লোকদেরকে তাদের নেতা বা মালিক চুপ করে বসে থাকতে বললে তারা বসে থাকে। কিন্তু আক্তারুজ্জামান এই তিন শ্রেণীর কোনো শ্রেণীতে নেই। তবুও সে বসে আছে। নাফিসের সাথে তার সম্পর্ক ব্যবসায়িক হওয়ায় তার উচিত এসে দরকারী কথা বলে চলে যাওয়া। কিন্তু সে এখানে এলেই আর উঠতে চায় না। এজন্য নাফিস তাকে আসার আগে ফোন করে আসতে বলেছে। তার সাথে ও এমনভাবে সময়টা ঠিক করে, যাতে বাড়ি ফেরার সর্বোচ্চ চল্লিশ মিনিট সময় বাকি থাকে। চল্লিশ মিনিট থাকতে এলে আক্তারুজ্জামানকে ত্রিশ মিনিট বসে থাকতে হয়। শেষ দশ মিনিটে নাফিস তার কথা শোনে।

সোমবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

গল্প::বন্ধ নিশ্বাস


তোতা নামটা উচ্চারণ করলেই সবাই বুঝে ফেলে, কার কথা বলা হচ্ছে। আড়াইহাজারের কোনো বালকের সামনেও যদি নামটা উচ্চারণ করা হয়, চোখের সামনে মনে হয় তার চেহারাটা ভেসে ওঠে। আড়াইহাজারের কথা যেমন ওরা জানে—ঈশা খাঁ তার আড়াই হাজার সৈন্য নিয়ে এক অভিযানে যাওয়ার সময় এখানে থেমেছিলেন বলে এখানকার নাম আড়াইহাজার, তেমনি তোতা মিয়ার বৃত্তান্তও তারা জানে। দুষ্ট তরুণরা বলে, ঐ তোতা মিয়া? য্যার কোনো রাইফেলই অহন আর কাম করে না? নিজেও ভোঁতা ঐয়া পইড়া রইছে, হেই বুইট্টা তোতা?
তার সাথে কারো দেখা হলে তোতা মিয়া ডাকটা সে পায়। ঘনিষ্ঠজনরাও তাকে তোতা মিয়া বলে। কিন্তু তার নাম যেটা উঠে গেছে, সেটা হলো বুইট্টা তোতা। বেঁটে হওয়ার কারণে তার এই উপাধি। বুইট্টা তোতার নাম শুনলে মেয়েদের মুখটা তিতা হয়ে যায়। তোতার সাথে তিতার একটা মিলও আছে। তখন তাদের গল্প করতে আর ভালো লাগে না। পুরুষরা তার নাম শুনলে যে তার নাম উচ্চারণ করে, তার দিকে তাকাতো—নতুন কোনো অঘটন ঘটলো কি না সেই আশঙ্কায়। এখন আর বুইট্টা তোতার তিক্ততা নেই। কিন্তু তিক্ত স্মৃতিকে কি কখনো মিষ্টি বানানো সম্ভব? নামটা শোনার সাথে সাথেই যে স্মৃতিগুলো জেগে ওঠে!
তহর আলী যে অস্ত্রের কারণে মানুষের কাছে সম্মানের পাত্র, সেই একই অস্ত্র দিয়ে তার ভাতিজা কামিয়েছে মানুষের ঘৃণা আর অভিশাপ। মুক্তিযুদ্ধের অস্ত্র আর জমা দেননি তহর আলী। মাচার ওপর তুষের মটকিতে রেখেছিলেন লুকিয়ে। প্রথম প্রথম তোতা সেটা এক ফাঁকে নিয়ে কাজ সেরে আবার জায়গামতো রেখে যেতো। চাচা বেঁচে থাকতে যেভাবে নিয়মিত অস্ত্রটার অস্তিত্ব পরীক্ষা করতেন, চাচীর সেই গরজ ছিলো না। সেটা তখন পুরোপুরিই তোতার দখলে।
অস্ত্রের কারণে তোতা খারাপ হয়েছে, সেটা বলা ঠিক হবে না। অস্ত্রটা তার খারাবির পথে আরো এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে মাত্র। সে খারাপ হয়েছিলো আগেই। পারিবারিক ঐতিহ্য গ্রে কাপড়ের ব্যবসা চালানোর জন্য তোতার সময় দেয়ার দরকার ছিলো না। কারণ সেটা তখনো তোতার বাপ মোহর আলী দেখাশোনা করে। গ্রে কাপড়ের ব্যবসার জন্য কোনো চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালাতে হয় না। এটা ছাপা কাপড়ের ব্যবসা না যে, বাজারে টিকে থাকার জন্য নিত্য নতুন ডিজাইনের চিন্তা করতে হবে।
তোতাকে তার বাপ স্কুলে যে পাঠায়নি, এমনটা না। কিন্তু সে স্কুলে না গেলে তার মায়ের অত সময় ছিলো না, যেমনটা আজকালকার শহরের মায়েদের আছে। মেঘনা নদীর পাড়ে ডাকাতের গ্রামে তোতার বন্ধু জুটে গিয়েছিলো, তারাই তোতাকে দুর্ধর্ষ বানিয়ে তোলে।  ডাকাতের গ্রামের ডাকাতরা ডাকাতি করে পেটের দায়ে। কিন্তু তোতার টাকা-পয়সার কোনো সমস্যা ছিলো না। তোতা যেতো বন্ধুদেরকে সাহায্য করার জন্য।
ডাকাতির সাথে তোতা যে কাজটা যোগ করে, তা কখনো কল্পনা করেনি তার বন্ধুরা। কারণ বন্ধুদের এলাকার মেয়েরাও তাদেরই গোত্রের; তাদের এলাকার; তাদের মতোই সাহসী। ছেলেদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিলো কবুতর নিয়ে। সেটা যখন ডাকাতদের গ্রামের মায়েদের পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তারা দা দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলে কবুতরের মালিকানা দাবিকারী অন্য এলাকার ছেলেকে। সে দা আজকালকার ইউনিভার্সিটির ছেলেরা যে রামদা ব্যবহার করে, সেরকম কোনো দা ছিলো না; গাছের ডালপালা কাটার সামান্য দা ছিলো। সুতরাং রাতে কাম করতে গিয়ে আকাম করে এলে যে তাদের স্ত্রীরা বুঝবে না, আর বুঝতে পারলে যে গাছের ডাল কেটে ফেলার মতো এক কোপে স্বামীর পুরুষত্বও চিরদিনের মতো শেষ করে দিতে যে সামান্য দ্বিধা করবে না, সে ব্যাপারে তারা সজাগ ছিলো। তাই বড়লোকদের বাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়ে তাদের থলথলে স্ত্রীদের প্রতি ততটা আকর্ষণবোধ না করলেও মাঝেমধ্যে তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসা কিছু মেহমান মেয়ে হয়তো আকর্ষণ করেছে তাদেরকে; কিন্তু সজাগ চিন্তাটার কারণে তারা সামনে এগোয়নি। বুইট্টা তোতাই সেই রীতি প্রথম ভাঙলো। বন্ধুরা ডাকাতি করতো ঘরের সম্পদ; তখন তোতা লুট করতে থাকতো ঘরণীর সম্পত্তি।
তোতার বয়স তখন তিরিশ পেরিয়ে তেত্তিরিশ। কিন্তু ওর মধ্যে বিয়ের কোনো চিন্তাভাবনা দেখা গেলো না। ওর মা একে-ওকে বলে; কিন্তু ততদিনে তার পুত্র যে নাম কামিয়েছে, তাতে এ তল্লাটে মেয়ে পাওয়া কোনোমতেই সম্ভব ছিলো না। মেয়ে খুঁজতে যেতে হবে নদীর ওপার। সেই কাজটা কে করে? তোতার বাপও ততদিনে নেই; ব্যবসা ধরেছে তার ছোট দুই ভাই। দুজনই বিয়ে করে ফেলেছে; মেঝটার দুটো বাচ্চাও হয়েছে। ছোট দুই ভাই বড় ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে মোটেও আগ্রহী নয়।
বিয়ে শেষ পর্যন্ত হয়েছিলো বুইট্টা তোতার। তার ডাকাত বন্ধুরাই বিয়ের আয়োজন করলো। আয়োজনটা এমনিতে হয়নি। বুইট্টার কারণে সেদিন প্রায় ধরা পড়তে গিয়েছিলো তারা। ডাকাতি শেষ; কিন্তু বুইট্টা তখনো শেষ করতে পারেনি। মেয়েটা এমন চিৎকার করছিলো, লোকজন জড়ো হয়ে চলে এসেছিলো বাড়ির কাছে। তোতা যখন ব্যস্ত হয়ে পড়তো, ওর অস্ত্রটা হাতে নিয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতো মশু। সেদিনও মশু দাঁড়িয়ে ছিলো; তোতাকে বারবার তাড়া দিচ্ছিলো, তোতা, শ্যাষ কর। কিন্তু তোতা শেষ করতে পারছিলো না। বাকিরা মালপত্র গুছিয়ে বাইরে গিয়ে প্রস্তুত হয়ে আছে। লোকজন যখন হৈ হৈ করে কাছাকাছি চলে এলো, বাইরে থেকে বদু এসে তোতাকে জাগিয়ে তুলে নিলো। কাঁধে তুলে নিয়েই লাগালো দৌড়। তোতার রাইফেলের তিনটা গুলি সেদিন শেষ করতে হয়েছিলো গ্রামের এগিয়ে আসা লোকজনকে ভয় দেখানোর জন্য।
পরদিনই তোতাকে নিয়ে বসে বন্ধুরা। বদু বলে, তোতা, তুই যেই মাইয়ারে কইবি, হেই মাইয়ারে তর লাইগা আইনা দিমু। কিন্তু এই কাম আর করন যাইবো না। আইজকা তরে তুইল্লা না আনলে ধরা খাইতাম নিশ্চিৎ।
তোতা জানিয়ে দেয়, মোকাররম আলীর ছটফটে মেয়েটাকে তার খুব পছন্দ। এবং সেদিনই রাতে সেই ছটফটে মেয়ে নিলুফাকে তুলে নিয়ে এলো তোতার বন্ধুরা; বিয়ে হলো মেঘনা নদীতে একটা ট্রলারের মধ্যে। তোতার বয়স তখন ছত্রিশে পড়েছে; নিলুফার বয়স কাবিননামায় আঠারো লেখা হলেও তোতার বন্ধুরা বলেছিলো, মাইয়ার বয়স আরো কম।
বিয়ের পর মোকাররম আলীর স্ত্রী গোপনে তার মেয়ের সাথে দেখা করতে এলেও নিলুফার কোনো আত্মীয়স্বজন তোতার বাড়িতে আসেনি। নিলুফার মা এসে তার মেয়ের জন্য কান্নাকাটি করলেও মেয়ে আরো কঠিন সুরে তাকে জানিয়ে দিতো, মা আমার কোনো কষ্ট নাই। তুমি খালি আমার লাইগা দোয়া কইরো।
বিয়ের সাড়ে চার মাসের মাথায় তোতা বা তোতা ওরফে বুইট্টা তোতা বিছানায় পড়লো। তার দুটো পা-ই অবশ হয়ে গেলো কোমর পর্যন্ত। কেউ বলে, ও যত মেয়ের অভিশাপ নিয়েছে মাথায়, সেই অভিশাপ ফলেছে; কেউ বা বলে নিলুফা কিছু একটা করে তোতার পা অবশ করে ফেলেছে; মুরুব্বিরা আরেকটা কথা শোনায়, ছোটবেলা সাপের সাথে বাঁদরামি করতে গিয়ে সাপ ওর পা পেঁচিয়ে ধরেছিলো, ধীরে ধীরে এতদিন পর সেটার ফল পাচ্ছে ও। সে যা-ই হোক, তোতার পছন্দের ছটফটে নিলুফার সারাদিন ঘরে বসে থাকার কোনো দরকার ছিলো না। অবশ হওয়ার কারণে তোতার খাওয়া-নাওয়া সবই হয়ে পড়লো রুটিনমাফিক। সেজন্য তার পেশাব-পায়খানাও হয় ঠিক সময়মতো। সেই সময়ে এসে নিলুফা তাকে বসিয়ে দেয়।
পায়ের সাথে সাথে হাতেও খুব একটা জোর পায় না তোতা। অবশ হওয়ার পরপরই তার চাচী আবার রাইফেলটা জাদুঘরে জমা দিয়ে আসে। থানায় দেয়নি, কারণ প্রতিবেশীরা তাকে জানিয়েছে, থানায় গেলে পুলিশ আরো উল্টো তোমার বিরুদ্ধে অস্ত্র রাখার দায়ে মামলা দিয়ে দেবে; তুমি যে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, সেটা ওরা জানতেও চাইবে না।
ছটফটে নিলুফা দিনের বেশিরভাগ সময়ই বাইরে থাকে। সে কই যায়, তোতা জানে না; জানতে চায়ও না। ওদের বাড়িতে বিয়ের পর প্রত্যেকের ঘর আলাদা হয়ে যায়। তোতারও আলাদা ঘর; দুই কোঠা মিলে ওর ঘর। ও শুয়ে থাকে সামনের কোঠায়; এটা একটু খোলামেলা; শুয়ে থাকলে উঠানের দিকে নজর যায়। আকাশও দেখা যায় কিছুটা; দিন-রাত বোঝা যায়। ভেতরের কোঠাটা ছিলো শোয়ার ঘর; সেখানে ও সাড়ে চার মাস শুতে পেরেছিলো।
নিলুফা এখনো সেই কোঠায় শোয়; তোতা এই কোঠা থেকে তার ঘন নিশ্বাসের আওয়াজ পায়। তোতার চোখে পড়া আলো প্রতিদিনই একটা সময় একটা ছায়া এসে ঢেকে দেয়। প্রতিদিন যে একই ছায়া আসে, এমনটা নয়। বিভিন্ন ছায়া আসে। ও চোখ বুজেই সেটা টের পায়। নিলুফার ঘন নিশ্বাসের সাথে আরো একটি নিশ্বাসের আওয়াজ পায় সে। মৃদু কিছু কথাবার্তাও থাকে সেই নিশ্বাসের সাথে। থাকে কিছু হাসি। চোখ বন্ধ করে থাকলেও তোতা কান বন্ধ করতে পারে না। তার কানে সেসব আসে। দাঁতে দাঁত কামড়ে সে নিশ্বাস বন্ধ করে রাখে। কিন্তু তার নিশ্বাস বন্ধ হয় না। আরো একটা আওয়াজ তার কানে আসে। যখনি তার ঘরে ছায়া ঢোকে, কিছু ছেলে রাস্তা থেকে বলতে বলতে দৌড়ে যায় : তোতা মিয়া, ভোঁতা মিয়া; তোতা মিয়া ভোঁতা মিয়া; তোতা মিয়া, ভোঁতা মিয়া।

শনিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

উপপদ্য

১.
দাও না যতই
শাল মুড়ি
নড়নচড়ন দেখেই বুঝি
খাচ্ছো তুমি ঝালমুড়ি

২.
ভূগোলে যা পাই না তা
খুঁজে পাই গুগোলে
ক্ষণিকেই যেতে পারি
পাক থেকে মুঘলে

৩.
ছেলে ভালো ছেলে ভালো
কারণ সে তেলে ভালো
শ্বশুরবাড়ির সবে তার তেলে বশ
জামাই হিসেবে সে পায় দশে দশ

বৃহস্পতিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

উপন্যাস : হা-না


পূর্বের অংশ


সংগীত থেকেই হানির সাথে পরিচয় নাফিসের। ও সেদিন ফেসবুকে ঢুকে মাউসের চাকা ঘোরাচ্ছিলো। ভিন্ন রকমের একটা কমেন্টে চোখ আটকে গেলো ওর। অনলাইনে কমেন্টগুলি সাধারণত ‘খুব সুন্দর’, ‘মারাত্মক’, ‘অসাধারণ’—এরকমের হয়। কোনো বিশ্লেষণমূলক মন্তব্য থাকে না। ওগুলোতে ও অভ্যস্ত। কিন্তু এই মেয়েটা যে প্রশ্নটা করেছিলো, তা ছিলো : সুন্দরীর প্রেমে পড়া নিয়ে আপনারা এত গান গান, সুন্দরী হওয়ার কারণে এসিডে জীবন শেষ হয়ে যাওয়া নিয়ে কোনো গান কেন গান না?
মেয়েটার প্রোফাইলে ঢুকে দেখতে পেলো নুয়ে পড়া একটা ফুলের ছবি দেয়া। মেয়েরা হয় কোনো বাচ্চার, অথবা কোনো নায়িকার কিংবা সুন্দর একটা ফুলের ছবি দেবে প্রোফাইলে। কিন্তু নুয়ে নেতিয়ে পড়া ফুলের ছবি সেই প্রথম ও কারো প্রোফাইলে দেখলো। মেসেজ পাঠিয়ে জবাব দিলো, ‘গানের সিডি-ডিভিডির খবর বা বিজ্ঞাপনে কী লেখা থাকে, বলুন তো।’
ও নিজেই আবার লিখলো, ‘লেখা থাকে, প্রকাশ খানের লারে লাপ্পা এখন বাজারে। বাজারের জন্য যেটা তৈরি হয়েছে, সেটাকে বাজারে চলনসই হতে হবে। বিষয় যতই সুন্দর হোক, সবার আগে চিন্তা থাকে—এই বিষয়টা বাজারে চলবে কি না। শিল্পী ইচ্ছে করলে সুন্দর গান ওয়েবে ছেড়ে দিতে পারে। তাকে কেন সিডি-ডিভিডিতে বন্দী করতে হবে? কিন্তু তাহলে আপাতদৃষ্টিতে তার কিছু পাওয়া হলো না। আপনি যা-ই ভাবেন না কেন, সত্য কথা হলো মা-বাবাও সন্তানকে নিয়ে চিন্তা করে, এই ছেলে বা এই মেয়ে চলবে কি না। তার জ্ঞান, তার সৌন্দর্য—এগুলো বাজারের চাহিদা অনুযায়ী না হলে সেই সন্তানকে নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। তাকে চলনসই করার জন্য মা-বাবার কোশেশের শেষ থাকে না।’
‘আপনার যুক্তির সাথে পুরোপুরি একমত হতে পারলাম না।’
‘আমি যা দেখছি এবং দেখেছি, তারই ভিত্তিতে বললাম।’
‘আপনার দেখা যায় দুই বছরে একটা অ্যালবাম বের হয়। এত ব্যবধান থাকে কেন?’
‘বাজারে চলার জন্য বলতে হবে, পছন্দসই গানের কথা-সুর পাইনি কিংবা ভীষণ ব্যস্ত। আর বাস্তবতা হলো...।’
‘বাস্তবতা কী?’
‘থাক। আপনার পুরো নাম কী?’
‘সংক্ষিপ্ত আর সম্পূর্ণ যা-ই বলেন, আমার নাম একটাই। ইংরেজিতে বললে মধু, আরবিতে খুশী, নোয়াখাইল্যা ভাষায় বললে পানি। কোনো দিক থেকেই খারাপ না।’

শনিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

উপন্যাস : হা-না


পূর্বের অংশ

সেদিনের ক্যাম্পাসের বিকেলের মতো ওর রুমে আজ বসে আছে পরিচিতজনেরা। সাব্বির-ফয়েজ তো অবশ্যই আছে। খাওয়াদাওয়ার আয়োজনও হয়েছে। সাব্বির তেহারি রান্না করে রেখেছে। হয়তো বা কারো কাছে সেই তেহারির ঘ্রাণ তাড়া দিচ্ছিলো, গান কেন তাড়াতাড়ি শেষ হয় না?
টিভিতে গান শেষ হওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশ থেকে কল এলো। ফাহমিদা কল করেছে। ‘তুমি না কি টিভিতে গান গেয়েছো?’
‘কেন, তুমি দেখোনি?’
‘তুমি কি জানিয়েছো, আজ তোমার গান দেখাবে টিভিতে?’
নাফিসের তখন কাচুমাচু অবস্থা। সোফা থেকে উঠে ব্যালকনিতে চলে এলো। ফাহমিদা বললো, ‘যেহেতু এটা কোনো সরাসরি অনুষ্ঠান না, অনেক আগেই এর পরিকল্পনা হয়েছে। আমাকে জানালে কি আমি খুব অখুশী হতাম?’
‘তুমি না জানলে অনুষ্ঠান দেখলে কীভাবে?’
‘আমরা অ্যাড দেখে জেনেছি।’
নাফিস কিছুক্ষণের জন্য চুপ করে গেলো। কী বলবে খুঁজে পেলো না। তাৎক্ষণিক জবাব আজো পর্যন্ত কাউকে ও দিতে পারেনি। ফাহমিদাকে তো নয়ই। জবাব না দিতে পেরে শেষ পর্যন্ত উপায় থাকে মাফ চাওয়া। এপর্যন্ত যে কত বার স্ত্রীর কাছে মাফ চেয়েছে, তা গুনে শেষ করা যাবে না। কিন্তু মাফ চাইতে চাইতেও মাফ চাওয়া বিষয়টা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, এটাকেও সম্ভবত ফাহমিদা গুরুত্ব দিচ্ছে না। সর্বশেষ উপায় চুপ করে থাকা। চুপ করে সব শুনে যায়।
ফাহমিদা বললো, ‘তুমি যে ওখানে মহাআনন্দে আছো, বুঝতে পারছি। আনন্দের জোয়ারে সব ভুলে গেছো। ভুলে গেছো, তোমার একজন স্ত্রী আছে। বিছানায় গেলে কল দাও কারণ শুধু তখন আমার অভাব অনুভব করো। সেরকম মেয়ে হলে বলতাম, শুধু এই একটা অভাববোধ থেকে আমাকে মনে রাখার দরকার নেই। যে দেশে আছো, সে দেশে তো এই অভাব পূরণ করা খুবই সহজ। কিন্তু আমি তোমাকেই বিয়ে করেছিলাম, তোমাকে নিয়েই থাকতে চাই।’
ফাহমিদা কেঁদে দিলো। নাফিসের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। লাইনটা কেটে যাওয়ার পরও ও কানে মোবাইল ধরে বাইরে তাকিয়ে রইলো অনেকক্ষণ। ভেতর থেকে সাব্বিরের ডাক শুনে ব্যালকনি ছাড়লো।
যদিও এতজন থাকার নিয়ম নেই তবু এই বাড়িটায় ওসহ এগারোজন থাকে। সাব্বির-ফয়েজ ওর ঘনিষ্ঠ হলেও দুজন আবার অন্য বাড়িতে থাকে। পাশাপাশি বাড়ি অবশ্য।
ততক্ষণে হুড়মুড় করে নিচে নামা শুরু হয়ে গেছে। সাব্বির সবার পেছনে। ও কি কিছুটা বুঝতে পেরেছে? এগিয়ে এসে নাফিসের পিঠে হাত রেখে বললো, ‘কোনো সমস্যা হলো না কি নাফিস ভাই?’
নাফিস নিজের ঘাড়ে হাতের তালু ঘষতে ঘষতে বললো, ‘একটা বিরাট ভুল করে ফেলেছি। বৌ খুব কষ্ট পেয়েছে।’
‘আমাকে কি বলা যায়?’
‘হ্যাঁ। টিভিতে যে আমার গান প্রচারিত হবে, এটা আমি ওকে বলতে ভুলে গেছি।’
সাব্বিরও নিচের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আসলেই এটা মারাত্মক ভুল হয়েছে। তবে আপনি বললে আমি ভাবীর সাথে কথা বলে দেখতে পারি।’
‘দ্যাখেন।’
‘ঠিক আছে, বলবো। আগে চলেন খাই। ওরা নিজেরা নিয়ে খাওয়া শুরু করলে পাতিল খালিও হয়ে যেতে পারে।’
খাওয়ার পর সাব্বির দশ মিনিটেরও বেশি সময় ফাহমিদার সাথে কথা বলেছিলো। নাফিস পাশে থেকে শুনছিলো সেসব কথা। ফাহমিদা নিজের তরফ থেকে কোনো কথা বলেনি। সাব্বির বোঝানোর চেষ্টা করছিলো, নাফিস নিজের গান কেমন না কেমন হয় তা নিয়ে খুবই লজ্জায় ছিলো। এজন্য কাউকেই এই অনুষ্ঠানের কথা বলেনি। প্রচার-প্রচারণা যা চালানোর তা সাব্বির নিজেই চালিয়েছে। এমনকি পুরো উদ্যোগের পেছনেই ছিলো সাব্বির।
ফাহমিদা প্রশ্ন করেছিলো, ‘সাব্বির ভাই বিয়ে করেছেন কি না জানি না। না করলেও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বোঝার কথা।’
‘বাংলাদেশের স্বামীরা স্ত্রীদের কাছ থেকে খোঁচা খেয়ে অভ্যস্ত তো, তাই নাফিস ভাই হয়তো শুরুতেই নিরুদ্দম হওয়ার ভয়ে আপনাকে বলেননি। অ্যালবাম বের হওয়ার পর আপনাকে দিয়ে মোড়ক উন্মোচন করিয়ে আপনাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছেন।’
‘ঠিক আছে সাব্বির ভাই, আমার এখন ভালো লাগছে না।’ একথা বলে ফাহমিদা লাইন কেটে দিয়েছিলো।
এরপর থেকে আজো পর্যন্ত নাফিসের গানের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না ফাহমিদা।

সোমবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

কিপ্টে [কিশোরকাব্য]


সুহৃদের ছোট চাচা
খুব বেশি কিপ্টে
কক্ষনো তিনি না কি
ওঠেন না লিফটে

মালামাল দিয়ে তাতে
নিজে যান সিঁড়িতে
দেহ তার পৌঁছেছে
তাই বিচ্ছিরিতে

একসাথে তিনি আর
মালামাল চাপলে
ওজনের ভারে লিফট
ক্ষয়ে গিয়ে কাঁপলে

লিফট তার ক্ষয় হবে
সেই ভয়ে হাড়ক্ষয়
করছেন সিঁড়ি ভেঙে
রোজ তিনি বারকয়

শনিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

উপন্যাস : হা-না

পূর্বের অংশ

হোটেল থেকে খাবার নেবো।’
‘আপনার রান্না করা লাগবে না। আমিই রান্না করবো।’
আলু, ফুলকপি, মাছ আর ডাল নিয়ে সাব্বির চলে এলো নাফিসের আপারটোনের বাসায়। রান্নায় নিজেই লেগে গেলো ও। নাফিসকে কিছু করতে দিলো না। বললো, ‘আপনি আজ গান গাবেন আর আমি শুনবো। আপনার গান শুনে আমার এক দাদার কথা মনে পড়ে গেলো। দাদার চাচাতো ভাই ছিলেন তিনি। আমাদের বাড়ির মসজিদে আজান দিতেন। তার আজানটা মনে হতো নদীর স্বাভাবিক পানির গতির মতো ভেতর থেকে স্বাভাবিকভাবে বেরিয়ে আসছে; তিনি কোনো কোশেশ ছাড়াই আজান দিচ্ছেন। সেই দাদা মারা গেছেন আরো সাত বছর আগে। আপনার গান শুনে আজ আমি অনুভব করলাম আপনার গানও ভেতর থেকে আসে; আপনি নিজের ওপর কোনো চাপ দেন না। শ্রোতা হিসেবে আমি যা বুঝি, আপনাকে তাই বললাম।’
সাব্বির রান্না শুরু করে দিলো; ও শুরু করলো গান। হিসাব করে দেখেছে, সেদিন ও সাব্বিরকে বাইশটা গান শুনিয়েছে।
সাব্বির জানতে চাইলো, ‘নাফিস ভাই, এত সুন্দর গানের গলা নিয়ে আপনি চুপ রইলেন কীভাবে?’
‘গান গাইতে জানলেই কি দুনিয়ার সবাইকে গেয়ে শোনাতে হবে?’
‘তা না। কিন্তু এটাও তো এক রকমের কৃপণতা যে, আপনার কাছে একটা উপকারী জিনিশ আছে; কিন্তু আপনি কারো উপকার করলেন না। যার জ্ঞান আছে, সে তার জ্ঞান দিয়ে মানুষের উপকার করবে; যার সম্পদ আছে, সে তার সম্পদ দিয়ে মানুষের উপকার করবে।’
‘যার শক্তি আছে, সে তার শক্তি দিয়ে?’
‘যার শক্তি আছে, তাকে তো আর বলতে হয় না। সে তার শক্তি দিয়ে মানুষের অপকার প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছে।’
‘সাব্বির ভাই, চিন্তা আছে দুনিয়া ঘুরে বেড়ানো। সেজন্য টাকা-পয়সা লাগবে; তাই ব্যবসা করতে হবে কিছু দিন। টাকা জমিয়ে নেমে পড়বো সফরে।’
‘তাহলে তো আপনার আরো গান গাওয়ার ব্যাপক সুযোগ। একেকটা পর্যটনকেন্দ্রে যাবেন; গান গাইবেন; সেখান থেকে যে টাকা আসবে তা দিয়ে আরেকটা দেশ ঘুরতে পারবেন।’
‘হ্যাঁ, যদি আমার গান শুনে যে দেশে থাকবো সে দেশ থেকে বের করে অন্য দেশে পাঠিয়ে দেয়, খারাপ না। বিনা পয়সায় দেশ ঘোরা যাবে।’
‘সব গুণীই এরকম বলে। পরে যখন বিখ্যাত হয়ে যায় তখন আবার ভাব নেয়।’
‘সেজন্যই তো প্রকাশ্যে গাইতে চাইছি না। তাহলে কি না আপনার মতো বন্ধুকে হারাতে হয়।’
‘কেন?’
‘আপনিই তো বললেন, বিখ্যাত লোকেরা ভাব নেয়। ভাব নিয়ে যদি আপনার মতো লোকের বিরাগভাজন হই, সেটা আমার জন্য বড় কিছু হারানো হবে।’
টেংরা মাছ দিয়ে রান্না করা আলু আর ফুলকপি দিয়ে সেদিন দুজনেই তিন থাল করে ভাত খেয়েছিলো। খেতে খেতে সাব্বির আসল কথাটা তুললো। ‘নাফিস ভাই, আপনি আমাদের চ্যানেলে গান গাইবেন। ওদিকে যা করা দরকার, আমি করবো।’
চিরাচরিত স্বভাবের মতো সেদিনও নাফিস এর জবাবে কিছু বলতে পারেনি। কোনো দিনই পারেনি কারো প্রস্তাবে সরাসরি না বলতে।
এর একুশ দিন পর অলটাইম চ্যানেলে নাফিসের গান প্রচারিত হলো। লন্ডনেই একটা স্টুডিওতে রেকর্ড করা হয়েছিলো গান। ওর জন্য দিনটা হওয়ার কথা ছিলো একটা আনন্দের দিন; সুখের দিন। কিন্তু সেটা মোটেই হয়নি।

চলবে